নাটক শিল্পী : সাধারণ গল্প হয়েও কেন এত জনপ্রিয়তা? (ভিডিও)
শিল্পী নাটক । ভাবছেন একটা সদ্য মুক্তি পাওয়া নাটকের রিভিউ দেয়ার কথা বলে আপনাদের বিয়েবাড়ি কিংবা টিকটকের দুনিয়ায় ঘুরিয়ে আনলাম কেন!
কারণ আছে রে ভাই!
এতক্ষণ যা দেখালাম সব জায়গায় একটি বিষয় কমন, খেয়াল করেছেন? করেন নাই? তাহলে আবার দেখেন প্রথম থেকে ভিডিওটা!
জ্বি, গানের কথাই বলছি। ‘ বুক চিন চিন করছে হায়, মন তোমায় কাছে চায়। ‘ শিরোনামের এই গানটি ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা ‘বাস্তব’ এ প্রথম ব্যবহার করা হয়। এরপর প্রায় ১৮ বছর পর, গেল মাসে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই গান। মহিদুল মহিম পরিচালিত নাটক ‘শিল্পী’তে নতুন করে গানটি গেয়েছেন জাহিদ পারভেজ পাভেল। কিন্তু কেন আলোচনায় এই গান? কেন-ই বা এত কথা হচ্ছে নাটক ‘শিল্পী’ নিয়ে?
গান নিয়ে আমরা আবার আলোচনায় আসবো। তার আগে চলুন এবার একটু নাটকের গল্পে ঢুঁ মারি৷
নাটকের গল্পের প্লট গড়ে উঠেছে একটু ভিন্ন বিষয়ের উপর, যেটি নিয়ে সচরাচর আমাদের দেশে সম্ভবত নাটক তৈরি হয় নি আর।
প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পীদের ভীড়ে দেশের প্রতিটি এলাকায় বা পাড়া মহল্লাতেই কিছু তরুণ তরুণী গান গেয়ে থাকেন পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে। কখনো-বা রাস্তার মোড়েই গান গেয়ে আসর জমিয়ে ফেলেন তারা। জীবিকা নির্বাহের পথ হয়ে উঠা এই পেশাটি নিয়েই এই নাটকের গল্প।

এই গল্পেও একজন গায়ক আর একজন গায়িকা আছেন। তারা মহল্লায় গান গেয়ে টাকা আয় করেন। একই এলাকায় একই কাজে যখন একাধিক ব্যাক্তি থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানে নীরব প্রতিযোগিতা চলতে থাকে, সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব, হয় টিকে থাকার লড়াইও। এমন করেই এগোয় শিল্পী’র গল্প।
তবে গল্পের চেয়ে এই নাটক তার জনপ্রিয়তার পারদ সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে বোধহয় গান দিয়েই। নতুন কোনো গান নয় কিন্তু, পুরনো দিনের গান-ই। তবে গায়কি, গানের প্রেজেন্টেশন আর গানের সাথে অভিনেতা অভিনেত্রীর নাচের অভিনয় গানগুলোকে জনপ্রিয় করে তুলেছে রাতারাতি। শুধু যে জনপ্রিয় সেটা ভাবাও ভুল অবশ্য। গানগুলো রীতিমতো হয়ে উঠেছে উৎসবের উপাদান। বিয়ে বাড়িতে বাজছে, বাজছে মহল্লার উৎসবে। সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডই তৈরি করে ফেলেছে শিল্পী’তে থাকা গানগুলো। ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য শিল্পীরা পর্যন্ত টিকটক বানাচ্ছে। আর এমন করেই নাটকটি দেখতে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ, বাড়ছে ইউটিউবের ভিউ। মাসখানেক আগে মুক্তি পাওয়া শিল্পী ছুঁয়ে ফেলেছে প্রায় ১০ মিলিয়ন ভিউ এর রেকর্ড।
কিন্তু নাটকটা কেমন হলো? কতটা হলো মানসম্মত? নাকি ভিউ-ই ঠিক করে দিলো নাটকের মান? চলুন তাহলে গল্পটায় আরেকটু ঢু্ঁ মারা যাক।
দুজন পথের কণ্ঠশিল্পী বা ‘স্ট্রিট সিঙ্গার’ একই এলাকার রাস্তায়-রাস্তায় গান গেয়ে বেড়ান। পুরুষ ও নারী কণ্ঠে গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে পারেন অভিনেতা নিশো। সেজন্য তার জনপ্রিয়তাও বেশি। অন্যদিকে অভিনেত্রী মেহজাবীনের শ্রোতা একটু কম।
গল্পটা মোটা দাগে খুবই সাধারণ একটা প্লটে তৈরি। গল্পের ভিতরে ঢুকার চেষ্টার চেয়ে কমেডি ধাঁচের কিছু দৃশ্যপট দিয়ে নাটকটিকে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকারী দৃশ্যগুলোতে অবশ্য কোনো কৃত্রিমতা নেই। আছে প্রাণ খুলেই হাসার আয়োজন। শেষটায় অনুমিতভাবেই ক্লাইমেক্স আছে তবে সেটা কতটা দর্শকের প্রাণ ভরিয়েছে সেটা অবশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ। গৎবাঁধা বাংলা নাটকের ভীড়ে শিল্পী’তে তেমন কোনো ভিন্নতা নেই। তাহলে কেন এত জনপ্রিয়তা?
সমালোচকরা বলছেন লাইট আর সেট বা লোকেশনের কথা। কালার গ্রেডিং আর ক্যামেরার কাজ নিয়ে প্রশংসা এসেছে। গল্প সাধারণ হলেও সেটি বলার ধরণের ভিন্নতাও এগিয়ে দিয়েছে শিল্পীর দর্শকপ্রিয়তা। আর অতি অবশ্যই গান। বিশেষ করে ‘বুক চিন চিন করছে হায়’ এর কথা বলতে হয় আলাদা করে। সপ্তাহ তিনেকের ব্যবধানে গানটির ভিউ ছাড়িয়েছে ৫ মিলিয়ন।
নাটকটির চরিত্রই ছিল দুইটি। চমক নামে গায়কের ভূমিকায় ছিলেন আফরান নিশো আর জরিনা নামে গায়িকার চরিত্রে মেহজাবিন চৌধুরী। ৫৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের পুরো নাটকে এই দুইজনই গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
‘নিশো-মেহজাবিন’ জুটি হিসেবে বহুদিন ধরেই একসাথে কাজ করে আসছেন। তাদের জুটি বরাবরই দর্শকপ্রিয়তার তালিকায় উপরের দিকে থেকেছে। সেই ধারাবাহিকতার প্রতিফলন দেখা গেছে শিল্পী’তেও। সাধারণ গল্পেও যে অসাধারণ আর অনবদ্য অভিনয়শৈলীতে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা যায়, টানা যায় দর্শক আকর্ষণ, শিল্পী’তে সেটির উদাহরণ রেখেছেন দু’জনই।
শিল্পীরা মানুষদের বিনোদন দেন। তার পরেও শিল্পীরাও যে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, তাদেরও যে দুঃখ কষ্ট আছে- মূলত নাটকটিতে এমনই একটা বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : অশ্লীল নাকি মানসম্পন্ন | আগস্ট ১৪ ওয়েব সিরিজ রিভিউ | August 14
আপনাদের কেমন লাগলো শিল্পী – কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!