যৌনাঙ্গে চুলকানি একটি অস্বস্তিকর এবং কখনো কখনো বেদনাদায়ক বিষয় যা যৌনাঙ্গে অস্বাভাবিক কোনো পদার্থ, কোনো সংক্রমণ বা মেনোপজের কারণে হতে পারে। এটি কোনো নির্দিষ্ট ত্বকের অসুখ বা যৌন সংক্রমণজনিত রোগের (এসটিডি) ফলাফল হিসাবেও হতে পারে। এমনটা খুব একটা শোনা যায় না তবে স্ট্রেস বা ভলভার ক্যান্সারের (vulvar cancer) কারণেও যৌনাঙ্গে চুলকানি দেখা দিতে পারে।

বেশিরভাগ সময় যৌনাঙ্গে চুলকানি হলে এটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে ধরা হয় না। তবে চুলকানি যদি গুরুতর হয়, সাথে জ্বালাপোড়া ভাব থাকে বা আপনি যদি কোন বিশেষ রোগের ঝুঁকি অনুভব করেণ তবে আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুণ।
যৌনাঙ্গে চুলকানি দেখা দেয় কেন?
নিচে যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়ার কিছু কারণ বর্ণনা করা হলো-

-কোন কেমিক্যাল বা জ্বালা ভাব সৃষ্টি করে এমন পদার্থ- জ্বালা ভাব সৃষ্টি করে এমন রাসায়নিক বা কোন এলিমেন্ট যদি যোনির সংস্পর্শে আসে তাহলে এর ফলে যোনিতে চুলকানি হতে পারে। এই সকল উপাদান অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যা যোনি সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি এবং ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। কিছু প্রচলিত উপাদানের মধ্যে রয়েছেঃ সাবান, বাবল বাথ, যৌনাঙ্গে ব্যবহৃত স্প্রে, ভ্যাজাইনাল ওয়াশ, কোন কারণে পারফিউম বা ট্যালকম পাউডার যৌনাঙ্গে প্রবেশ করা ইত্যাদি।
-অনেক সময় ডায়বেটিস বা বিভিন্নরকম মুত্রনালীর সমস্যার কারণেও মহিলাদের যৌনাঙ্গে চুলকানি বা অস্বস্তি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সাদা স্রাব বা যৌনাঙ্গে দুর্গন্ধ সৃষ্টির মত জটিল লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

-মানব দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ আমাদের ত্বক। আর আমাদের ত্বকে বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে৷ চর্মরোগ আমাদের জন্য একটি পরিচিত শব্দ, তবে সঠিক সময়, সঠিক চিকিৎসার অভাব এই চর্মরোগকে কখনো কখনো জটিল করে তুলতে পারে। অন্যান্য অঙ্গের মত চর্মরোগ আমাদের যৌনাঙ্গেও দেখা দিতে পারে, যেমন একজিমা, সরিয়াসিস ইত্যাদি। এই অসুখ শরীরের অন্য স্থানে শুরু হলেও চিকিৎসার অভাব এটিকে যৌনাঙ্গেও ছড়াতে পারে। এর ফলে চামড়ায় লাল ভাব দেখা দেয় এবং চুলকানি অনুভব হয়।
একজিমা যার আরেক নাম এটোপিক ডার্মাটাইটিস। এই রোগে আক্রান্ত স্থানে শুরুর দিকে র্যাশ দেখা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এজমা কিংবা এলার্জিতে আগে থেকে আক্রান্ত থাকতে পারে। র্যাশগুলো সাধারণত লাল হয় এবং ত্বকের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে চামড়া উঠে আসতে পারে। যা পরবর্তীতে যৌনাঙ্গে দেখা যায়।
-একজিমার মতোই আরও একটি চর্মরোগ সরিয়াসিস৷ এর ফলে চুলের গোড়ায় বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চামড়া উঠে আসা, চুলকানি ভাবের সাথে অস্বস্তি হতে পারে। সরিয়াসিসের অতিরিক্ত বৃদ্ধি কখনো কখনো যৌনাঙ্গে ছড়াতে পারে।
ইস্ট ইনফেকশন

ইস্ট একটি সাধারণ ফাঙ্গাস যা নারীদের যৌনাঙ্গে খুব স্বাভাবিক ভাবেই জন্মায়। এই ফাঙ্গাস শরীরে তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না, তবে যৌনাঙ্গ যদি নিয়মিত সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা না হয়, বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন নারীর যদি অতিরিক্ত ফাঙ্গাস জন্মায় তাহলে এটি এক ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
এই ইনফেকশনটির নাম ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন। এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ইনফেকশন যা প্রতি ৪ জনের ৩ জন মহিলার শরীরে জীবনে কখনো না কখনো দেখা দায়।
আরও পড়ুনঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি সঠিক?
এই ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি হয় যখন যৌনাঙ্গে অতিরিক্ত ফাঙ্গাস তৈরী হয় যা সাধারণত হয় যখন কেউ কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সাথে ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো কেও মেরে ফেলে এবং মানব দেহে বিভিন্ন রকম ফাঙ্গাস নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
যৌনাঙ্গে ইস্টের অতিরিক্ত বৃদ্ধি চুলকানি, জ্বালাপোড়া ভাব এবং ঘন স্রাব সৃষ্টি করতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস যৌনাঙ্গে চুলকানি সৃষ্টির আরও একটি কারণ। ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশনের মতোই ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস শরীরের ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়৷ তবে এই রোগের সবসময় উপসর্গ দেখা দেয় না, যখন উপসর্গগুলো দেখা যায় তা সাধারণত যৌনাঙ্গে চুলকানি বা অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের কারণে হওয়া স্রাব হতে পারে পাতলা ধুসর রঙের বা সাদা, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ফোমের মতো স্রাবও সৃষ্টি করতে পারে।
বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ

অনেক ধরনের সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা এসটিডি এর কারণেও নারীদের যোনিপথে চুলকানি হতে পারে। এই সকল অসুখের মধ্যে আছে ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, হারপিস ইত্যাদি যা অরক্ষিত যৌন মেলামেশার কারণে হতে পারে৷ যার ফলে যৌনাঙ্গে চুলকানি বা অস্বস্তি হতে পারে। তা ছাড়া যোনিপথ দিয়ে সবুজ বা হলুদ স্রাব এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়াও হতে পারে।
মেনোপজ
যে সকল মহিলা মেনোপজের সময় অতিবাহিত করছে বা যাদের ইতিমধ্যে মেনোপজ হয়ে গেছে তারা যৌনাঙ্গে চুলকানির মতো সমস্যায় পরতে পারেন। এটি মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে যা যোনিপথকে শুষ্ক করে ফেলে। যদি এই সমস্যার জন্য চিকিৎসা না করানো হয় তবে এই শুষ্কতা থেকে চুলকানি এবং জ্বালা হতে পারে।
ভলভার ক্যান্সার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোনিপথ চুলকানি ভলভার ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। এটি এক ধরণের ক্যান্সার যা ভলভাতে হয় যা মহিলাদের যৌনাঙ্গের বাহ্যিক অংশ। ভলভার ক্যান্সারের লক্ষণ অনেক সময় দেখা না-ও দিতে পারে। তবে যখন লক্ষণগুলো দেখা দেয় তখন এগুলোর মধ্যে যৌনাঙ্গে চুলকানি, অস্বাভাবিক রক্তপাত, বা ভলভার অঞ্চলে ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
কখন বুঝবেন ডাক্তার দেখানো জরুরি?
যখন যৌনাঙ্গে সর্বপ্রথম চুলকানি অনুভব হবে তখনই ডাক্তারের কাছে যাওয়া ভালো। তবে অল্প চুলকানি বা একবার হয়ে আর না থাকা এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন না হলেও চলবে। আর যদি যৌনাঙ্গে চুলকানি অতিরিক্ত অনুভব হয়, এতই বেশি যার ফলে আপনার রাতে ঘুম ভেঙে যায় বা দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো জরুরি।
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চুলকানি জটিল কোন সমস্যার লক্ষণ নয়। তবে যোনির মতো সংবেদনশীল অংশে দীর্ঘদিন চুলকানি অন্য দিকে মোড় নিতে পারে তাই দেরি না করে ডাক্তার দেখানো ভালো।

চুলকানি যদি এক সপ্তাহ বা এর চেয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয় আর সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে, যেমন যোনিপথে ফুস্কুড়ি, ব্যাথা বা অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, লাল ভাব বা ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, অস্বাভাবিক স্রাব কিংবা শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তারকে আপনার সব লক্ষণগুলো বিস্তারিত জানাতে হবে। কতদিন থেকে সমস্যা হচ্ছে এবং কী কী সমস্যা হচ্ছে তা আপনি ডাক্তারের কাছে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। হতে পারে ডাক্তার আপনার যোনিপথে আঙুল দিয়ে পরিক্ষা করবেন, বা সমস্যা হওয়া নির্দিষ্ট স্থান থেকে স্রাব বা চামড়া নিয়ে পরীক্ষা করবেন।
প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার আপনার যৌন জীবন নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। সব পরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ শেষে ডাক্তার আপনাকে আপনার চুলকানি বা অস্বস্তির সঠিক কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন৷
আরো পড়ুন : সঠিক মাপের ব্রা : না জেনে শরীরের ক্ষতি করছেন না তো ?
তা ছাড়া যৌনাঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা এড়াতে আপনি প্রতিনিয়ত আপনার যোনিপথ পরিচ্ছন্ন রাখুন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে সচেতন থাকুন। প্রতিদিন পানি দিয়ে যোনিমুখ এবং এর অন্যান্য অংশ পরিষ্কার করুন, প্রয়োজন বুঝে মাসে এক বা দুই বার কুসুম গরম পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করুন।
মনে রাখবেন নারীদের যৌনাঙ্গ নিজে থেকেই নিজের অভ্যন্তরীণ অংশগুলো পরিষ্কার রাখে। তাই ভিতরে আঙুল দিয়ে বা সুগন্ধি সাবান দিয়ে বা বাজারে পাওয়া ভ্যাজাইনাল ওয়াশ দিয়ে আলাদা ভাবে পরিষ্কার করার কোন প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত ঘষে পরিষ্কার করতে যাবেন না, এতে যোনিতে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে যেয়ে উল্টো হিতে বিপরীত হতে পারে।
This is a Bengali language article onatments and Diagnosis