জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি সঠিক ?
বলা হয় জন্মনিয়ন্ত্রণের যতগুলো পদ্ধতি আছে তার কোনোটাই শতভাগ নিরাপদ নয়। কেউ পরিবার পরিকল্পনার জন্য যত পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন তার পরেও যদি তিনি গর্ভবতী হয়ে যান তাহলে এতে মোটেও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তবে হঠাৎ করে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ কারোরই কাম্য নয়। তাই নতুন প্রজন্মের নারী- পুরুষ চায় তাদের পরিবার হোক পরিপাটি ও গুছানো। শতভাগ নিরাপদ না, তবুও পরিবার পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই৷ সেরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে বলা হয় কনডম এবং পিলের সমন্বয় জুটিকে। তার সাথে কনডম ব্যবহারে বিভিন্ন এসটিডি’র ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব।
সাধারণত কনডমের প্যাকেটের গায়ে এর ৯৮% বা তার কিছু বেশি বা কম শতাংশ কার্যকরীতার কথা উল্লেখ করা থাকে। তার সাথে কিছু কিছু সময় বিশেষ মুহুর্তে কনডম ফেটে যাওয়া বা প্রক্রিয়াকালীন ত্রুটির কারণেও অনেক ক্ষেত্রে কনডমের কার্যকরীতা কমতে পারে।

মানব দেহের জন্য এসটিডি হতে পারে প্রাণঘাতী। এসটিডি (STD) বলা হয় বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগকে। এসটিডি মানব দেহের জন্য হতে পারে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এই রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তার পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিক ভাবে পোহাতে হয় অনেক বেশি অপমান, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। এই তালিকায় অনেক ধরনের মরণব্যাধি রোগও আওতাভুক্ত। যেমন: এইচআইভি, ক্লিমেডিয়া সিফিলিস, ক্র্যাব, ইত্যাদি।
গর্ভধারণের ঝুঁকি শতভাগ এড়াতে করণীয় কী?
গর্ভধারণের ঝুঁকি শতভাগ এড়ানো সম্ভব শুধু মাত্র যৌন কাজের অন্তিম সময় নারী এবং পুরুষের লিঙ্গ আলাদা করে ফেলা। মোট কথা পুরুষ এবং নারী উভয়কেই খেয়াল রাখতে হবে যাতে পুরুষের শুক্রাণু কিছুতেই নারীর যোনিপথ বা যোনিমুখে প্রবেশ না করে। তবে যদি কারো পক্ষে এমনটা করা সম্ভব না হয় তাহলে যা করা যেতে পারে তা হলো ভালো মানের কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা। যেমন আইইউডি বা ইমপ্লান্ট এবং তার সাথে কনডম।
আর যদি কেউ এর কোনটাই না করে থাকেন তাহলে তার জন্য সেরা উপায় হতে পারে ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল (ইসিপি)।

কিছু কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অন্যগুলোর থেকে ভালো কাজ করে। যেগুলো তুলনামূলক ভালো এবং নির্ভেজাল, আর তা হলো ইমপ্লান্ট এবং আইইউডি। অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে পিল, রিং, প্যাচ এবং শট। তবে এর প্রতিটাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে আর খেয়াল রাখতে হবে যৌনমিলনের পরপরই যাতে এগুলো নিয়ম মেনে অবলম্বন করা হয়। তার মানে যত যাই হোক পিল খাওয়া কোনোভাবেই ভোলা যাবে না, অন্যথায় অযাচিত গর্ভধারণের ঝুঁকি পোহাতে হবে। তাই যেই পন্থাই অনুসরণ করা হোক না কেন, তা নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে।
তবে কার জন্য কোন পদ্ধতিটি সঠিক তা জানতে গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, তিনি দম্পতির বয়স, চাহিদা, শারীরিক গঠনের উপর আমল করে সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পরামর্শ দিতে পারবেন। চাইলে এলাকা ভিত্তিক ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিক বা যে কোন হাসপাতালের মেডিসিন ডাক্তারের সাথেও পরামর্শ করা যেতে পারে।

বেশিরভাগ মানুষের জন্য কনডম একটি ভালো উপায় তবে অনেকে পিল খেতে বেশি সাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন৷ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদেরকেই বেশিরভাগ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখা যায়। পুরুষের উদাসীনতা এবং অনিচ্ছার কারণেও অনেক নারীকে বাধ্য হয়ে পিল খেতে হয়।
পিল খাওয়া সব নারীর জন্য ভালো না-ও হতে পারে। যেহেতু পিল নারীর হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বেশিরভাগ নারীর ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত মাসিক, তারিখের আগেই মাসিকের লক্ষণ, অল্প বা অতিরিক্ত রক্তপাত, রক্তস্বল্পতা, মাথা ঘুরানো, বমিভাব, দূর্বলতা সহ ইত্যাদি আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ইমপ্লান্টের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ইমপ্লান্ট পদ্ধতিতে একটি ছোট আকৃতির রড নারীর বাহুতে স্থাপন করা হয়৷ এটি নারীর শরীরে প্রজেস্টোরেন হরমোন বৃদ্ধি করে যা প্রতি মাসে নারীর ডিম্বাণু জন্মানো প্রতিরোধ করে। এটি শরীরে কোন সমস্যা ছাড়া তিন বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারে এবং শরীরের সাথে মানিয়ে গেলে তা দীর্ঘদিন পর্যন্ত চিন্তামুক্ত রাখতে পারে।
ইমপ্লান্ট যে কোন সময় আবার বের করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব। যে সকল নারী পিল খেতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বা পিল খেলে সমস্যা হয় তাদের জন্য ইমপ্লান্ট হতে পারে একটি ভালো জন্মনিয়ন্ত্রণ উপায়।

পিল খেতে ভুলে যাওয়া, কনডম ব্যবহার না করা বা অন্য কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা না হলে ইমারজেন্সি কনট্রোসেপটিভ পিল খাওয়া জন্মনিয়ন্ত্রণের আরও একটি উপায়। তবে এটি নিয়মিত খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপরিকল্পিত যৌন মেলামেশার পর এটি জরুরি অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। তবে নিয়মিত খাওয়ার জন্য এই পিল উপযুক্ত নয়।
ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা ইসিপি সাধারণত এক প্যাকেটে একটি বা দুইটি ট্যাবলেট থাকে। এটি প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী বা ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত যৌনমিলনের ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে।
আরো পড়ুন : সন্তান: ভালবাসার পরিণতি নাকি বোঝাপোড়ার অনুষঙ্গ
কনডমকেই সাধারণত ভালো মানের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ধরা হয়। কেননা এটি এসটিডি’র হাত থেকে রক্ষা করে, গর্ভধারণের ঝুঁকি কমায় এবং এতে নারী বা পুরুষের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য কনডম এবং পিল একসাথে ব্যবহার করা উত্তম, বা অন্য যে কোন জন্মনিয়ন্ত্রণের সাথে কনডমের ব্যবহার দিবে বাড়তি সুরক্ষা এবং একমাত্র কনডমই এসটিডি থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
কনডমের আরও একটি ভালো দিক হলো, এটি যে কোনো জায়গায় সহজেই উপলুব্ধ। ঔষধের দোকান, মুদি দোকান এমনকি গ্যাসস্টেশনেও এখন কনডম অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। কনডম একেবারেই দামী নয় এবং কখনো কখনো কনডম বিভিন্ন কমিউনিটি এবং ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যেও পাওয়া যায়।
This is a Bengali Language article on Best Ways to Prevent Unwanted Pregnancy.
Reference : Best Ways to Prevent Unwanted Pregnancy