১৮ বছর বয়সের পর আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি পায় না কেন?
বয়সের মতো উচ্চতাও কেবলই একটি সংখ্যা এবং কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব উচ্চতা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তবুও যখন একজন তরুণ বা তরুণী দেখে যে, সে আর দশজনের মতো ততটা লম্বা হচ্ছে না, তখন তারা চায় এমন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে যা তাদের উচ্চতা দ্রুত বাড়িয়ে তুলবে। এজন্য কৌশল হিসেবে নানা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয় এবং নানা ধরনের অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার আশ্রয় নেয়। কিন্তু ১৮ বছর বয়সের পর কি আসলেই উচ্চতা বৃদ্ধি সম্ভব? চলুন দেখা যাক বিজ্ঞান কী বলে-

বিজ্ঞান বলছে, ১৮ বছর বয়সের পর ক্রমবর্ধমান বয়সের সাথে কারো উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি অর্জনের উপায় খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ব্যক্তির সামগ্রিক উচ্চতায় বেশ কয়েকটি কারণ অবদান রাখে। তবে জিনগত কারণের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কোনো ব্যক্তির উচ্চতার প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ জিন দ্বারা নির্ধারিত হয়। বাকি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ নির্ধারিত হয় বিভিন্ন পরিবেশগত কারণ, লাইফস্টাইল এবং পুষ্টিগত কারণের জন্য।
যে হরমোনটি উচ্চতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী সেটি হলো গ্রোথ হরমোন। গ্রোথ হরমোন তৈরি হয় মানুষের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের সোমাট্রোপ কোষ থেকে। এটিই মূলত আইজিএফ নামক অপর একটি হরমোনের মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধির কাজটি করে থাকে। গ্রোথ হরমোন শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি, কোষ বিভাজন এবং নতুন কোষ তৈরিতে উদ্দীপনা জোগায়। ছোটকাল থেকে এই হরমোনটির আধিক্য হলে কেউ মাত্রাতিরিক্ত লম্বা হয় আর হরমোনটির কমতি হলে শিশু খর্বাকৃতি বা বেঁটে হয়ে থাকে।
আপনার উচ্চতা ১৮ বছর বয়সের পরে আপনার উচ্চতা আর বৃদ্ধি পায় না কারণ তখন অস্থির গ্রোথ প্লেট অস্থির সঙ্গে মিলিয়ে যায়। দেহের উচ্চতা বাড়ার প্রধান অঙ্গ হাতপায়ের লম্বা অস্থিগুলোর প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত গ্রোথ প্লেট নামক অপেক্ষাকৃত নরম কার্টিলেজগঠিত অংশ হতেই উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অস্থির এই গ্রোথ প্লেট নামক অংশেই গ্রোথ হরমোনের ক্রিয়ার ফলে অস্থি বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে দেহের উচ্চতা বাড়তে থাকে। এটি যখন সক্রিয় বা খোলা থাকা অবস্থায় থাকে তখন হাড়ের দৈর্ঘ্যের বাড়ে; তাই আপনার উচ্চতাও তখন বৃদ্ধি পায়। যখন কোনও ব্যক্তি তার যৌবনের শেষ প্রান্তে থাকে, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গ্রোথ প্লেটগুলো শক্ত হয় এবং একসময় বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, হাড়ের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে গ্রোথ প্লেটগুলো প্রায় ১৬ বছর বয়সে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে সংকুচিত হতে শুরু করে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোর সামান্য সংকোচনের কারণে হাড়ের বৃদ্ধির তারতম্য ঘটে। যদিও এর সংখ্যাটা খুবই কম। তবে নির্দিষ্ট বয়সের পর যখন গ্রোথ প্লেইটগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখন কোনো অনুশীলন বা প্রসারিত কৌশলই আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে না। উচ্চতা বাড়ানোর জন্য বাজারের চটকদার নানান বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই সাধারণত বিশ্বাস করা এই যে, নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম বা ক্রিয়াকলাপ বা সাঁতার কাটা একজন ব্যক্তির উচ্চতা বাড়াতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এগুলো কেবল দাবীই এবং এই দাবিগুলোর পক্ষে শক্ত প্রমাণ এখনো পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন শরীরের জন্য মেডিটেশনের গুরুত্ব কতটা?
তবে ১৮ বছর বয়সের আগে কৈশোরের বছরগুলোতে একটি সুস্থ জীবনধারা আপনাকে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। যদিও আপনার উচ্চতা বৃদ্ধির মাত্র ২০-৪০ শতাংশ আপনার জীবনধারা উপর নির্ভর করে, তবে এটি এখনও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আপনি কোন অপরিহার্য পুষ্টির অভাবে ভুগছেন কি না তা নিশ্চিত করুন। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ফল এবং সবুজ সবজি আপনার ভোজনের বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যথেষ্ট প্রোটিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ডিম, হাঁস, চর্বিযুক্ত মাংস, এবং দুগ্ধজাত পণ্য প্রোটিনের একটি ভাল উৎস। তাই কৈশোরের সময়গুলোতে সেসব মেনে চলুন।
সর্বোপরি, উচ্চতাই সব কিছু নয়। দিনশেষে আপনার কাছে যা আছে তা গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। উচ্চতা কারও সাফল্য কিংবা সুখ নির্ধারণ করে দিতে পারে না। বরং আপনার সফলতা এবং ব্যক্তিত্বই আপনাকে পৌঁছে দিবে সম্মানের এক অনন্য উচ্চতায়।
This is a Bengali article on ‘why doesn’t your height increase after 18’.
Referrence:
Is it possible to increase your height after 18